শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬) মাইক্রোসফ্ট মঙ্গলবার তার সর্বশেষ স্বদেশী ওপেন-সোর্স এআই মডেল প্রকাশ করেছে বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর কাতারের  আমীরের বাংলাদেশ সফর: আগামীর বাংলাদেশের বর্নিল সম্ভাবনা ব্র্যাক ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব ‘কার্নিভাল অব চেইঞ্জ ২০২৪’ শনিবার বাংলাদেশ ও কুয়েতের বন্ধুত্বের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন বৃষ্টিপাত না হলে এবং চলমান তাপদহ ও প্রচন্ড গরমে ঈশ্বরদী এলাকায় লিচুসহ ১০ হাজার ১’শ ২৫ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দিল্লি বোলার রসিখকে জরিমানা করেছে বিসিসিআই জাপান দ্বৈত-ব্যবহারের সামরিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ‘পরিবর্তনের অংশ’ হিসেবে দেখে মধ্যবিত্তের নিজস্ব সুপার শপ স্বপ্ন – সাব্বির হাসান নাসির

রাজনীতির দুই বিপদ: তোষামোদি ও সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধাবাদী

  • Update Time : শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১.৫৮ পিএম
Swadesh Roy Opinion Sketch Design

স্বদেশ রায়

যে কোন দেশের রাজনীতিতে সব সময়ই নতুন নতুন অনেক সমস্যা সামনে আসে  অনেকগুলো সাদা চোখে দেখা যায়, অনেকগুলো অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা বুঝতে পারেন। আর গবেষকরা তো রয়েছেন, তারা গবেষণা করলে আরো অনেক দিকে বেরিয়ে আসে।

তবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম দুই সমস্যা-  তোষামোদি ও সামাজিক মিডিয়ায় কিছু সুবিধাবাদীর নানান ধরনের প্রচার, উস্কানি, ও ভুল তথ্য প্রয়োগ।

সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় তোষামোদি শুধুমাত্র যখন যে দল সরকারে থাকে সেই দলেই থাকে বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষমতাসীন, বিরোধী স্বাভাবিক দল, ছোট দল, ধর্মীয় দলসহ সব দলের নেতা ও কর্মীদের একটি মৌলিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে তোষামোদি। এটা কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃনমূল পর্যন্ত।

কেন এই তোষামোদি চরিত্র রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে এলো এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও গবেষণা’র দরকার। তবে সাধারণভাবে একটা বিষয় বোঝা যায়, বাংলাদেশে রাজনীতি এখন আর শুধু এমন একটি পেশা নয় যা জনকল্যাণ বা মানুষের কল্যাণ বা শুধু রাষ্ট্র চিন্তার জন্যে। বর্তমানে অনান্য পেশার মতো, কোন কোন ক্ষেত্রে এটা আরো ভালো পেশা যে- এই পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখলে অন্যান্য অনেক পেশার থেকে আয় রোজগার বেশি হয়।

অনেকে এখানে শুধুমাত্র সরকারি দলের দিকে আঙুল তোলেন। ওই আঙুলকে মোটেই না নামিয়ে তারা যদি তাকিয়ে দেখেন, ছোট ছোট যে দলগুলো যারা প্রেসক্লাবে সার্বক্ষণিক যে মানুষ ভাড়া পাওয়া যায় তাদের নিয়ে মাঝে মাঝে সরকার বিরোধী সভা করেন, আর কেউ কেউ টিভি টকশোতে যান। কিছুদিন আগেও এদের বেশিভাগ শাহবাগ সহ বিভিন্ন এলাকায় চায়ের দাম মেটাতে পারতো না, তারা এখন দামী গাড়ি থেকেই প্রেসক্লাবে নামেন। এর থেকেই বোঝা যায় রাজনীতি এখন একটি অর্থকরি পেশা। এ কারণে তাদের কর্মীরাও বুঝে নিয়েছেন, নেতার পাশে থাকতে পারলে তিনিও অর্থনৈতিক বলয়ে থাকতে পারবেন।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন ও বড় বিরোধীদলগুলোতে তৃনমূল অবধি তোষামোদি পৌঁছে যাবার কারণ দলের সাংগঠনিক রাজনীতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। আগে শুধুমাত্র ট্রাডিশনাল রাজনৈতিক দল নয়, সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী শাসকরাও যখন রাজনৈতিক দল গঠন করতেন, তখনও দেখা যেতো তারা বিভিন্ন দল থেকে ভালো ভালো সাংগঠনিক ক্ষমতা সম্পন্ন নেতা সংগ্রহ করার চেষ্টা করতেন। যাতে করে ধীরে ধীরে তাদের দলের মধ্যে বেশ বড় মাপের নেতা ও বড় আকারের কর্মী বাহিনী হয়।

ওই নেতারা সামরিক সরকার প্রধানের মুখের ওপর সত্য কথা বলতেন। এমনকি প্রকাশ্যেও সত্য কথা বলতেন। যেমন, এরশাদ ক্ষমতায় এসে প্রধান সামরিক শাসক হিসেবে তার নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরিকে প্রধান করে রাজনৈতিক দল ঘোষণা করলে ওই দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রেস কনফারেন্সে মিজান চৌধুরি বলেন, “অদৃশ্য নেতাকে দৃশ্যমান হতে হবে।“ অদৃশ্য থেকে দল এগিয়ে নেয়া যায় না। মিজান চৌধুরি তোষামোদি করেননি। সত্য কথা বলেছিলেন।

তেমনি ওবায়দুর রহমান যখন বিএনপিকে থেকে বহিস্কৃত হয়ে জনতা দল গঠন করেছেন সে সময়ে একদিন তার আসাদ গেটের বাসায় নানান গল্পের ভেতর তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেবার পরে জিয়াউর রহমান তাকে বলেন, আপনরা যেভাবে সবাই মিলে যেমন বঙ্গবন্ধুকে তৈরি করেছিলেন, আমাকেও তেমনি করে তার মতো তৈরি করেন।

 

ওয়াবদুর রহমান নিঃসংকোচে বলেছিলেন, আপনাকে জিয়াউর রহমান তৈরি করা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে দ্বিতীয় আরেকজন বঙ্গবন্ধু তৈরি করা যাবে না। মুজিবভাই একজনই।

এভাবে এখন কোন নেতা বা কর্মী তৃনমূল পর্যায়েও কোন সঠিক কথা বলবেন না। কারণ, তারা জানে তাদের মূল রাজনীতি নয়, মূল বিষয় হলো দলে টিকে থাকা ও নেতার বলয়ে থাকা। কারণ, কোন দলেই এখন খুব কম জায়গা আছে সেখানে সাংগঠনিক যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে ওঠা যায়। সব কিছুই বিভিন্ন স্তরের ক্ষমতাবান নেতার ওপর নির্ভর করে। তারপরেও যে বিষয়টি ছোট বড় সব দলে দাঁড়িয়ে গেছে, নেতার বা পজিশনের পরিবর্তনটা বেশিক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যেই থেকে যায়। তাই কর্মীরা বা অন্য নেতারা জানে তাদেরকে শুধুমাত্র নেতার বলয়ের মধ্যে থাকতে হবে। আর ওই বলয়ে থাকলে তার আয় রোজগার হবে। তার নিজের ওই পজিশনে যাবার সম্ভাবনা কম। কারণ, বর্তমান নেতার অবর্তমানে ওটা পরিবারে থেকে যাবে- সে মনোনয়ন বা পজিশন পাবে না। তাই স্বাভাবিকই তারা শুধুমাত্র বলয়ে থাকার জন্যে তোষামোদিই করে। রাজনীতি থেকে বাস্তবে এই তোষামোদি দূর করার কোন পথ আছে কিনা তা এ মুহূর্তে বলা কঠিন।

অন্যদিকে তোষামোদির বাইরে রাজনীতির জন্যে আরেক ভয়াবহ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক ফোরাম, ইউটিউব, ফেসবুক, এক্স হ্যান্ডেলে এক দল সুবিধাবাদী যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে উস্কানির পথে ঠেলে দিচ্ছে। এবং তা শুধু তাদের নিজের স্বার্থে। দেশ বা কোন দলের চিন্তা বাস্তবে তাদের মাথায় নেই।

এই সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধাবাদীদের কবলে এখন সরকারি দলের থেকে বিরোধী দলগুলো বেশি পড়েছে। দেশের মিডিয়া নানা কারণে বিরোধী দলকে ওই ভাবে আগের মতো স্পেস দেয় না। অন্যদিকে একটা সময়ে যেমন বিদেশী মিডিয়াতে বাংলাদেশের রাজনীতির খবর প্রচার হতো, এখন তা হয় না।

যে কারণে বিরোধী দলের এই স্পেস কম পাবার সুযোগটা নিয়ে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার ওই সুবিধাবাদী গ্রুপ। তারা নানান ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখে। এবং তাদের চিন্তাধারা মাফিক বিশ্ব রাজনীতি ও দেশের রাজনীতিকে মেপে অনেকটা গ্রাম্য ঝগড়ার পর্যায়ে নিয়ে যায় তারা বিষয়গুলো।এর ভেতর দি য়ে তাদের ভালো আয় হয়। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিউ বাড়লে একটা অর্থ পাওয়া যায় তবে এটা সম্পূর্ণ তাদের বিষয়। কিন্তু দেশের জন্যে দুর্ভাগ্য হলো, বিরোধী দলের অনেক বড় নেতা বা কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ার ওই সব সুবিধাবাদীদের মতামতকে গ্রহন করে তাদের রাজনীতিকে সেদিকে ঠেলে দেবার চেষ্টা করে।

 

কোন একটা দেশের রাজনীতির জন্যে এ এক ভয়াবহ বিষয়। কারণ, রাজনীতি একটি দীর্ঘ জার্নি। এখানে থিওরি জানা ছাড়াও অভিজ্ঞতা যেমন বিষয় তেমনি পরিবর্তনশীল পৃথিবীকে সব সময়ই উপলব্ধি করতে হয়। এ জার্নিতে যেমন অজ্ঞদের শেষ অবধি কোন বিজয় নেই, তেমনি শর্টকাট কোন পথও নেই।

বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো,  এদেশের অনেক দলের রাজনীতিক ওই সব তথাকথিত জনপ্রিয় অথচ রাজনৈতিকভাবে অজ্ঞ সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধাবাদীদের কথা মতো শুধু তাদের ফাঁদে পা দেন না, তাদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করেন।

রাজনীতি করতে হলে কখনও সরকারি দলে থাকতে হয়, কখনও বিরোধী দলে থাকতে হয়। দুটোর ভেতর খুব একটা পার্থক্য নেই। কারণ, রাজনীতির মর্যাদা সমান। পার্থক্য হয়ে যায় তখনই যখন রাজনীতিক তার মর্যাদা নামিয়ে ফেলেন।

কাজী নজরুল ইসলামকে যারা খুব কাছে থেকে দেখেছেন, যেমন অচিন্তকুমার সেনগুপ্ত, তারা বাল্যবন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপধ্যায়, এমনকি কমরেড মুজা ফর আহমদ, খান মুঈনউদ্দিন প্রমুখ’র লেখা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া যায়, নজরুল জীবনে বহুবার বহু ধরনের কষ্টে এবং দুরবস্তায় পড়েছেন, কিন্তু কখনও নিজের মর্যাদারহানি ঘটাননি। নিজেকে ছোট করেনি।

বাস্তবে পৃথিবীর যে কোন পেশায় যে কোন ধরনের দুরবস্থা কখনও কখনও আসতে পারে। তাদেরকে সেখান থেকে উত্তরণের জন্যে নজরুলকে আদর্শ হিসেবে নেয়া উচিত। কোন বড় দলের নেতারা যখন সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধাবাদীদের সঙ্গে যোগযোগ করে বা তাদের ফাঁদে পা দেন তখন মূলত তাদের দেউলিয়াত্বই প্রকাশ পায়। প্রকাশ পায় তারা ভুলে গেছেন, তাদের অনেক নেতার বা তার নিজেরও দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে।

নিজেকে ও নিজের অবস্থানকে ভুলে যাবার থেকে বড় ভুল মনে হয় কোন পেশায় আর নেই।

লেখক: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক- সারাক্ষণ ও The Present World

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024