বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মাইক্রোসফ্ট মঙ্গলবার তার সর্বশেষ স্বদেশী ওপেন-সোর্স এআই মডেল প্রকাশ করেছে বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর কাতারের  আমীরের বাংলাদেশ সফর: আগামীর বাংলাদেশের বর্নিল সম্ভাবনা ব্র্যাক ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব ‘কার্নিভাল অব চেইঞ্জ ২০২৪’ শনিবার বাংলাদেশ ও কুয়েতের বন্ধুত্বের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন বৃষ্টিপাত না হলে এবং চলমান তাপদহ ও প্রচন্ড গরমে ঈশ্বরদী এলাকায় লিচুসহ ১০ হাজার ১’শ ২৫ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দিল্লি বোলার রসিখকে জরিমানা করেছে বিসিসিআই জাপান দ্বৈত-ব্যবহারের সামরিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ‘পরিবর্তনের অংশ’ হিসেবে দেখে মধ্যবিত্তের নিজস্ব সুপার শপ স্বপ্ন – সাব্বির হাসান নাসির অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত ও তামান্না ভাটিয়াকে আদালতে জিজ্ঞাসাবাদ: অবৈধ আইপিএল স্ট্রিমিং

নির্বাচন বর্জনের ধারা দেশের রাজনীতিতে কোন ধরনের পরিবর্তন আনছে

  • Update Time : শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪, ১১.০০ এএম

স্বদেশ রায়

 

বিএনপি ২০১৪ তে পাঁচটি বড় সিটি কর্পোরেশনের সব কটিতে জেতার পরেও সাধারণ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে কেন নির্বাচন বর্জন করে নির্বাচন ঠেকানোর কৌশল গ্রহন করেছিলো, সে বিষয়টি আজো অস্পষ্ট। কারণ, আমাদের দেশের কোন রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে কোন মূল্যায়নপত্র তৈরি করে না এবং তা প্রকাশও করে না। অন্যদিকে পাকিস্তান আমলে বা আশির দশক অবধি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় ফোরাম যতটা শক্তিশালী ও আলোচনা- সমালোচনা নির্ভর ছিলো – বর্তমানে সেটাও অনুপস্থিত। তাই দেশের কোন রাজনৈতিক দল কেন এমন রাজনীতি করছে, তার ফলে তাদের দলীয় ও দেশীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে বা তার প্রতিক্রিয়া কী হচ্ছে- সে বিষয়ে সঠিক মূল্যায়ন করার সুযোগ অনেক কমে গেছে।

যাহোক, ২০১৪তে সাধারণ নির্বাচন বিএনপি বা তাদের জোট ঠেকাতে পারেনি। ভিন্নভাবে দেশের নির্বাচন হয়েছিলো। এরপরে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন থেকে বিএনপি ২০১৮’র সাধারণ নির্বাচনের পূর্ব অবধি এক অর্থে দূরে ছিলো। তারপরে তারা ২০১৮’র নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গড়ে নির্বাচনে যোগ দিলেও- সে নির্বাচন ওই অর্থে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ না হয়ে ভিন্ন চরিত্র নেয়। তারপর থেকে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন থেকে সর্ম্পূন দূরে সরে গেছে। এমনকি ধারনা করা হয়েছিলো,স্থানীয় সরকার থেকে রাজনৈতিক প্রতীক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরে তাদের সমর্থকরা হয়তো নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু এ যাবত যে ক’টি সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে সেখানে তাদেরকে অংশ গ্রহন করতে দেখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সব থেকে লক্ষ্যনীয় বিষয়, নির্বাচনে ভোটারের অংশ গ্রহন কমে গেছে অস্বাভাবিক হারে। বিএনপির কয়েকজন রাজনীতিকের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, মানুষ যে ভোট দিতে আসছে না এটা তাঁরা তাদের রাজনৈতিক বিজয় মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন, তাদের কর্মী ও সমর্থকরা তাদের নির্দেশমত নির্বাচন বয়কট করছে। এমনকি আওয়ামী লীগের একজন জনপ্রিয় নেতা, গত নির্বাচনে যার এলাকায় তাঁর কর্মী ও সমর্থকদের বড় অংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তিনিও ব্যক্তিগত আলোচনায় বলেন, বিষয়টি তাকে বিষ্মিত করেছে, বিএনপি’র সমর্থক ও কর্মীরা প্রায় কেউই ভোট কেন্দ্রে আসেনি।

আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র নেতাদের এই পর্যবেক্ষণ থেকে ধরে নেয়া যায় বিএনপি’র নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা তাদের দলীয় নির্দেশ মানছে। এবং এটা বিএনপির অনেক বড় সাফল্য। তারা হয়তো আপাতাত এই সাফল্য ধরে রাখতে চায়। এবং ভবিষ্যতের জন্যে অপেক্ষা করতে চায়। হয়তো তারা দীর্ঘ মেয়াদী কোন কিছু ভাবছে। বিএনপি সমর্থক এবং খুবই বিচক্ষণ একজন মানুষ সম্ভবত ২০১৫’র দিকে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে আলাপচারিতার বলেছিলেন, আওয়ামীলীগ যদি একুশ বছর রাস্তায় থাকতে পারে, তাহলে বিএনপির একুশ বছর রাস্তায় থাকতে অসুবিধা কি? ঠিক একইভাবে প্রয়াত এক প্রাজ্ঞ সাংবাদিক, ১৯৯৭ এর দিকে আমার লেখার একটা অংশের সঙ্গে দ্বিমত করে একজন সিনিয়র হিসেবে বলেছিলেন, দেখ আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ মনে করে বিএনপিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারলে দলটি শেষ হয়ে যাবে। সাংবাদিক হিসেবে তুমি একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করো। কারণ, দেখ আওয়ামী লীগ একুশ বছর রাজপথে থেকেও টিকে ছিলো। কোন একজন ব্যক্তি তো এই আওয়ামীলীগকে টিকিয়ে রাখেননি। এমনিকি শেখ হাসিনা দেশের ফেরার আগের ছয় বছর ওই ভাবে আওয়ামী লীগের মূল নেতা কে তাও স্থির ছিলো না। তারপরেও সারাদশের গ্রামেগঞ্জের কোন না কোন বাড়ির ছেলে মেয়েরা দলটিকে টিকিয়ে রেখেছিলো। তুমি খোঁজ নিলে দেখতে পারবে তারই কোন চাচাতো ভাই বা ফুপাতো ভাই এমনকি তার নিজের ভাই বোনও বিএনপি করে। তাই এক ভাই যদি আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে পারে আরেক ভাই ঠিকই বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে পারবে একুশ বছর। তিনি বিএনপি সমর্থক ছিলেন না। সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে তাঁর দ্বায়িত্ব হিসেবে অনুজ প্রতীম সাংবাদিককেই তিনি এ কথা বলেছিলেন।

কিন্তু ১৯৯৭ এর সিনিয়র সাংবাদিকের মতামত, ২০১৫’র বিএনপি সমর্থক বিচক্ষণ ব্যক্তির বক্তব্য, “একুশ বছর” আওয়ামী লীগের রাস্তায় থাকা এ সবই এখন অনেক অতীতে চলে গেছে। তাছাড়া দ্রুত একটি নতুন প্রজম্ম সামনে চলে এসেছে, যারা অনেকটা বিশ্বায়নের সঙ্গে যুক্ত।

তাই দেশের রাজনীতিতে অতীতে কী ঘটেছে তাকে অবশ্যই বর্তমানের হিসেবে নিতে হবে। তবে এর সঙ্গে অবশ্যই বর্তমানকে যতদূর সম্ভব নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, বিএনপি ও আওয়ামীলীগের অনেক নেতা মনে করছেন, ভোটারদের যে বড় অংশ নির্বাচন থেকে দূরে থাকছেন, এটা বিএনপির সাফল্য। যে কোন চিন্তার সবটুকু সঠিক হিসেবে দেখা ঠিক নয়। বরং এর সঙ্গে সঙ্গে অনান্য দিকগুলোও বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন। যেমন প্রথমত একটি বিষয় সামনে আসে যে বাস্তবে দেশের একশভাগ মানুষই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়। সকল রাজনৈতিক দলের কর্মী মিলে হয়তো দেশের মানুষের একটি বড় অংশ হতে পারে। তবে এর বাইরেও মানুষ আছেন যারা রাজনীতির সঙ্গে কখনই নিজেকে সংশ্লিষ্ট করেন না। অন্যদিকে দেশের মানুষের একটি বড় অংশ যে শুধু বিএনপির আহবানে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন না- এমন সরল হিসাবও করা ঠিক নয়।

বরং এখানে অনেকগুলো বিষয় সামনে আসে। প্রথমত, এ দেশের মানুষ কয়েক প্রজম্ম ধরে রাজনীতিকদের বিশ্বাস করেছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্টি বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, সামরিক শাসক বিরোধী আন্দোলন। আর এসব পথ পার হয়ে এসে তারা রাজনৈতিক দলের শাসন দেখছে। তাই এ শাসন নিয়ে সাধারণ মানুষ এমনকি দলীয় কর্মীদের নির্মোহ মূল্যায়ন প্রয়োজন আছে। আবার যে মানুষেরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন ও রাজনৈতিক দলের কোন সুবিধা ভোগ করেন না তারাও রাজনীতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কে কী ভাবছে তার সত্যাসত্য জানা দরকার।

অন্যদিকে আরেকটি বিষয়ও এখন বিশ্বব্যাপী সামনে আসছে। অর্থাত্‌ রাজনৈতিক দল, রাজনীতি ও রাষ্ট্র বাস্তবে ব্যক্তি মানুষের জীবনের উন্নতিতে কতটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়ক হচ্ছে। কারণ, বিশ্বায়নের এবং প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে মানুষ নিজেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন করছে- যেমনটি মানুষ করে এসেছে সুদূর অতীত থেকে। মাঝখানে একটা সময়ে শিল্প বিপ্লব নির্ভর ক্যাপিটালইজম ও অনেকটা ইউটোপিয় ধারনার সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরিতে বড় একটা শ্রেনীর মানুষ জড়িয়ে পড়েছিলো। উভয় ক্ষেত্রেই ভিন্নভাবে হলেও ধারনা ছিলো রাষ্ট্রই হবে প্রতিটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সহায়ক। কিন্তু গত তিন দশকের বেশি সময় থেকে এই আকাঙ্খা থেকে মানুষ ধীরে ধীরে সরে আসছে। এটা রাজনীতি ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতা না মানুষের স্বয়ম্ভূ সক্ষমতা বাড়ছে তাও বিশ্লেষণ করার দাবী রাখে।

বাস্তবে পৃথিবীতে যে সময়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতি ঘিরে এই পরিবর্তন শুরু হয়েছে সে সময়েই বাংলাদেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম একটি স্তম্ভ নির্বাচন বিমুখ করা হচ্ছে। এক পক্ষ বলতে পারে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না আসার ফলে এমনটি হচ্ছে। আরেক পক্ষ বলতে পারে,সরকার সঠিক নির্বাচনের পরিবেশ দিচ্ছে না তাই এমনটি ঘটছে। এটা বাস্তবে দুই পক্ষের রাজনৈতিক দর কষাকষি ও ক্ষমতা কেন্দ্রিক একটি বিষয়।

সত্য হলো, এই বাস্তবতায় দেশের এক অংশ মানুষ নির্বাচন বিমুখতার মধ্য দিয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে যাকে প্রকৃত অর্থে রাজনীতি সম্পৃক্ত হওয়া বলে তা হবার সুযোগ কখনই পায়নি। কারণ, ব্রিটিশ বিরোধীতা, ধর্মীয় জনগোষ্টি বিরোধীতা, পাকিস্তান বিরোধীতা, সামরিক শাসন বিরোধীতা সর্বোপরি এক দল অপর দলের ব্যক্তিগত বিরোধীতার ভেতর দিয়েই এদেশের রাজনীতি বেড়ে উঠেছে। তাই রাজনীতি বলতে যায় বোঝায় তার শেকড় ওই অর্থে মানুষের মধ্যে খুব বেশি নেই। এমনকি রাজনীতি যে স্থির সমাজের সহায়ক সেটাও মানুষের চিন্তায় তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তেমন রাজনীতির ওই ভাবে বিকাশও হয়নি।

এই ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশের রাষ্ট্র ও সমাজে ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিবেশ বজায় রাখতে হলে অনেক কিছুই এ মুহূর্তে ভেবে দেখার দাবী রাখে। এই সব কিছুর মধ্যে সমাজ ও রাজনীতির অনান্য স্তম্ভগুলোর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন নামক এ স্তম্ভটি নিয়ে সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের নীতি নির্ধারকদের মনে হয় এখন বিশেষভাবে চিন্তা করার সময়।

লেখক: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও সারাক্ষণ- এর সম্পাদক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024