বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

জবাবদিহিতা, ন্যায় বিচার এবং নিহতদের স্মরণে স্মৃতিফলক করার দাবি ব্লাস্টের

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ৮.১৬ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

২৪ এপ্রিল ২০১৩ইং তারিখে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় ১,১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন, পাশাপাশি গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন আরো ১,১৬৯ জন শ্রমিক। এ বিপর্য়ের ১১ বছর অতিক্রান্ত হলেও সর্বমোট ২০টি মামলা চলমান রয়েছে যার একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। এমনকি একজন ব্যতিত সকল আসামীই জামিনে রয়েছে।

ভুক্তভূগি এক নারী তার দূর্দশার কথা জানাচ্ছেন

এ মামলা সমূহের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক শ্রম আদালতে দায়েরকৃত ফৌজদারী মামলাসমূহ বর্তমানে এখনও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীর পর্যায়ে রয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কিংবা তাদের পরিবারকে এখনও কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি, যদিও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক এবং তাদের পরিবার রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড হতে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।

এছাড়াও এ বিপর্যয়ের পর রাষ্ট্র ও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতে অনেক ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কিন্তু জবাবদিহিতা ও ন্যায় বিচার এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।বাংলাদেশ শ্রম আইনে নিহত শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম ২ লক্ষ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের জন্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা আছে যা কোনোভাবেই সময়োপযোগী নয়।

ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার চেষ্টা

ব্লাস্টের পক্ষ থেকে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত শ্রমিকদের এবং তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের আহবান জানাচ্ছে। এছাড়াও এই ধরণের দুর্ঘটনার শিকার আহত বা নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণের সময়ে অবশ্যই তার ভবিষ্যৎ প্রাপ্য মজুরী, চাকুরী শেষে প্রাপ্য গ্রাচ্যুইটি, অনুমিত চিকিৎসা খরচ, পরিবারের পোষ্যদের অনুমিত খরচ, দুর্ঘটনার পরবর্তী শ্রমিকের মানসিক চাপ এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও উচ্চ আদালতে নজির বিবেচনায় নেওয়ার জন্য ব্লাস্ট জোর দাবী জানাচ্ছে।

এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরন এবং পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণে ব্লাস্ট নিম্নরূপ ১০ দফা সুপারিশ করছে –

১) দায়েরকৃত ফৌজদারী মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

২) শ্রম আদালতে দায়েরকৃত ফৌজদারী চলমান মামলার তারিখসমূহে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে মন্ত্রনালয়ের তদারকি বৃদ্ধি এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করা;

বিশ্ব কাাঁপানো ছবি

৩) দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মামলাগুলি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করা এবং দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। এছাড়া আইনগত দুর্বলতা এরূপ দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী হলে তা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা;

৪) এ মামলাগুলোকে অধিক স্পর্শকাতর মামলা হিসেবে বিবেচনা করা;

৫) এ সকল মামলার নিয়মিত অগ্রগতি বা দীর্ঘসূত্রিতাসহ সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করা;

৬) রানা প্লাজা ও তাজরীন সহ সারাদেশের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইএলও কনভেনশন ১২১, টর্ট আইন এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫-এর ভিত্তিতে শ্রমিকদের সারা জীবনের আয়ের ক্ষতি ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আদালতের আদেশে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণের একটি জাতীয় মানদন্ড তৈরী করতে হবে।

ধ্বংসস্তূপ

৭) রানা প্লাজা ভবন ধসে আহত শ্রমিকদের মনোসামাজিক চিকিৎসাসহ দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিশ্চিতকরণসহ সকল আহত শ্রমিকের ও সকল নিহত শ্রমিকদের পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণে ও উক্ত ব্যবস্থা পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ।

৮) সাভার ও জুরাইনে বিপর্যয়ে প্রাণ হারানো সকলের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে জুরাইন কবরস্থানে তাদের নামফলক স্থাপন।

৯) শ্রম আইন অনুযায়ী নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে বার্ষিক পরিদর্শন প্রতিবেদন (অগ্রগতি এবং দুর্ঘটনার তথ্যসহ) প্রকাশ করা।

১০) কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য (occupational safety) সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তবায়ন ও তদারকি জোরদার করা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024