করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউয়ে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ মানুষের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সংক্রমণের সংখ্যায় খুব দ্রুতই দেশটি ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় হতে চলেছে। এরইমধ্যে আগামীকাল শুক্রবার থেকে চেন্নাইয়ে শুরু হচ্ছে ভারতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ আইপিএল। বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এবং বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর।
আইপিএলকে ফ্র্যাঞ্জাইজিভিত্তিক সবচেয়ে বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বলে মেনে নিয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। কারণ ভারতের সব সেরা ও উদীয়মান ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রায় সব দেশের ক্রিকেটাররাই এতে খেলে, সেটি হোক কম বা বেশি।
গত বছর করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) আইপিএল সরিয়ে নিয়ে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মধ্যপ্রাচ্যের মরুর দেশটিতে বায়ো-বাবল তৈরি করে দর্শকশূন্য তিনটি স্টেডিয়ামে হয় খেলা। প্রথমবারের মতো করোনা-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া টুর্নামেন্টটিকে সাফল্যের একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়।
কিন্তু এবার ১৪তম আইপিএল দেশের মাটিতে আয়োজন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিসিসিআই। হু হু করে বাড়ছে করোনা। আক্রান্ত হয়েছেন ক্রিকেটার, মাঠকর্মী, দলের কর্মীসহ অনেকে। মঙ্গলবার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের স্কাউট ও উইকেটকিপিং পরামর্শক কিরণ মোরে পজিটিভ হওয়ার পর চিন্তাটা আরো বেড়ে গেছে। চেন্নাই থেকে বিমান ধরার সময় মোরে নেগেটিভ থাকলেও জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢোকার পাঁচ দিন পর তাঁর কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ধারণা করা হচ্ছে বিমানবন্দর থেকেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে বিসিসিআই সরকারের কাছে আইপিএলের জন্যবিমানবন্দরে বিশেষ চেক-ইন কাউন্টারের আবেদন করেছে।
এবারের আইপিএলে প্রতিটি দলকেই অন্তত তিনবার বিমান ধরতে হবে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, বিমানবন্দরে আলাদা চেক-ইন কাউন্টার তৈরি হচ্ছে যাতে জৈব সুরক্ষা বলয় নিরাপদ থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা করা হবে। বিশেষ কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যেনি জৈব সুরক্ষার দায়িত্বে থাকবেন। মাস্ক ছাড়া কোনভাবেই ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। এটি দেখার দাযিত্ব ওই বায়ো-বাবল তত্বাবধায়কের।
ক্রিকেটারদের বাইরে খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জন্য আলাদা জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য ব্লুটুথ যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কোনো ক্রিকেটার বা কর্মী পজিটিভ ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেই তাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে সাতদিন। তবে সংস্পর্শ কম হলে দুটি নেগেটিভ রিপোর্টের পর তাকে অনুশীলনের অনুমতি দেওয়া হবে।
তবে এত করেও ৯ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ৬টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠেয় ৮ দলের টুর্নামেন্টটি শেষ পর্যন্ত করোনা-বোমা হয়ে ওঠে কি না সেই চিন্তা হচ্ছে অনেকেরই। ৬টি ভেন্যু চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়াম, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে, বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা, কলকাতার ইডেন গার্ডেন ও আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে খেলবে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, দিল্লি ক্যাপিটালস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই সুপার কিংস,রাজস্থান রয়্যালস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও পাঞ্জাব কিংস।
করোনার বাড়াবাড়ির মধ্যে এবারের আইপিএল আয়োজন জনমনে প্রশ্ন জাগিয়েছে মূলত এই বিষয়গুলি নিয়ে-
- এবারো কেন টুর্নামেন্ট আরব-আমিরাতে আয়োজন করা হলো না? বিসিসিআইয়ের অনেক অংশীজনই আশ্বস্ত ছিলেন যে আরব-আমিরাতে হলেই ভলো হতো।
- মাঠে দর্শকই যদি না থাকবে তাহলে কেন ৬টি ভেন্য করা হলো?
- স্বাস্থ্য নির্দেশিকা তৈরি এবং কার্যকর করতে দেরি হয়ে গেছে। আইসোলেশন বিধিও হয়তো লঙ্ঘিত হয়েছে। বিদেশি খেলোয়াড়দের ভিসা দেওয়া হয়েছে বিলম্বে।
- বিসিসিআই গতবারের মতো বায়ো-বাবল তৈরি ও তা রক্ষা করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেস্ট্রাটার মতো কোনো নিরাপত্তা ও টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়নি।
/পিকে/