হেফাজতের তাণ্ডব ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে নারী নিয়ে আটক হওয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কাণ্ড নিয়ে দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি শুধু এইটুক বলব, দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য্য ধরেন। আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরেই এগোতে হবে। আর এই সমস্ত ধর্মের নামে অধর্মের কাজ জনগণ কখনোই মেনে নেবে না, কখনোই সহ্য করবে না।’
সন্ত্রাস করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশ্বের সবচেয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার ধর্ম। তারা (হেফাজতের নেতাকর্মীরা) ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করেন বলেই আজ ইসলাম হুমকির মধ্যে। তারা আসলে ধর্ম ব্যবসায়ী। তাদের ছাড় দেয়া হবে না। যারাই ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মের বদনাম হবে, এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। এই ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা মুখে ধর্মের কথা, ইসলামের নাম বলে চলবেন আর অধর্মীয় কাজ করবেন, এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।’
রোববার (০৪ এপ্রিল) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আর এভাবে পবিত্র ধর্মকে কেউ অসম্মান করুক, সেটাও আমরা চাই না। আমরা চাই, এ দেশ এগিয়ে যাবে। এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করে, সেটাই করবে। যার যার ধর্ম, সে সে পালন করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ কি শুধু এগুলো বসে বসে সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না। এখানে কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ কেন ধৈর্য্য দেখিয়েছে? আমরা ধৈর্য্য দেখিয়েছি, এগুলো থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছি। কারণ, সংঘাতে সংঘাত বাড়ে, আমরা তা চাইনি। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ভালোভাবে উদযাপন করতে চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা এটা করছেন, দেশবাসী এটার বিচার করবে এবং দেখবে, তাদের চরিত্রটা কি? গতকালকে (শনিবার) দেখেছেন, তারা একদিকে ইসলামের নামে, ধর্মের নামে, পবিত্রতার নামে এতো কিছু বলেন আবার গিয়ে একটা অপবিত্র কাজ করে আসেন, ধরা পড়েন সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে। একটা রিসোর্টে ধরা পড়েছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল। তিনি ধরা পড়লেন এবং সেটা ঢাকার জন্য নানা রকম চেষ্টা। পার্লারে কাজ করেন একজন নারী, তাকে স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দেন, আবার নিজের স্ত্রীর কাছে বলেন যে, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলে ফেলেছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন, এ ধরনের অসত্য কথা বলতে পারেন? তারা তো বলতে পারেন না। তারা কি ধর্ম পালন করেন? মানুষকে কি ধর্ম শেখাবেন? হেফাজতের যারা সদস্য, তাদেরকেও অনুরোধ করব, একটু বুঝে নিন, কেমন নেতৃত্ব আপনাদের? আগুন লাগিয়ে জ্বালাও পোড়াও করে বিনোদন করতে গেলেন একটা রিসোর্টে তাও একজন নারীকে নিয়ে। এটাই তো বাস্তবতা। অর্থাৎ, তারা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। ইসলাম ধর্মকে তারা ছোট করে দিচ্ছেন। কিছু লোকের জন্য এই ধর্মে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নাম জুড়ে যাচ্ছে। আর এখন তো যে চরিত্র দেখালেন, দুশ্চরিত্রের নামও জুড়ে দিচ্ছেন তারাই।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। যে ইসলাম ধর্ম সবচেয়ে সহনশীলতার কথা শিখিয়েছে শাস্তির কথা বলেছে, সাধারণ মানুষের কথা বলেছে, মানুষের উন্নয়নের কথা বলেছে সেই পবিত্র ধর্মকে তারা কলুষিত করে দিচ্ছেন। তারা ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছেন। তাদের এতো অর্থ কোথা থেকে আসে এই বিনোদনের, সেটাও একটা প্রশ্ন। কাজেই এটা দেশবাসী বিচার করবে, আর আইন তার আপন গতিতে চলবে।’
হেফাজতকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের নাম হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু তারা ধর্মের নামে অধর্ম করেন। তারা ধর্ম ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জামায়াত-বিএনপি। কিছু হলেই সরকারি অফিস, আমাদের বাড়িতে আগুন দেন। আগুনে কি একজনের বাড়ি পোড়ে? কাল যদি আপনাদের বাড়ি, মাদ্রাসায় আগুন লাগে, আপনারা কী করবেন? মানুষ কি তা বসে বসে দেখবে? আর আইন তার আপন গতিতে চলবে, সেটুকুও আমি বলতে চাই। কারণ, একজন মুসলমান হিসেবে আরেকজন মুসলমানের জান, মাল রক্ষা করা, হেফাজত করা তাদের দায়িত্ব। অথচ হেফাজতের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছেন। আর বিএনপি-জামায়াত হচ্ছে তাদের মদদদাতা। এই লজ্জা শুধু বাংলাদেশের জনগণের নয়, এই লজ্জা বিশ্বজুড়ে, সমস্ত পৃথিবীর মুসলমানদের।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পবিত্র ধর্মটাকে তারা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিচ্ছেন। তাদের এই সমস্ত অপকর্মে বহু মানুষের জীবন গেছে। এই কারণে ২৬ মার্চ অনেক মানুষের জীবন গেছে। এর জন্য দায়ী তো তারা। কাজেই আমি শুধু এইটুকু বলব, দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য্য ধরেন। আমার কাছে বিস্তারিত দেয়া আছে। আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধরেই এগোতে হবে।’
/এআর/