নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সব বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন ফখরুল। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কাশিমপুর কারাগারে বন্দী অবস্থায় ব্লগার মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগতি-অসংগতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে, সে জন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোস্টকে কোনোভাবেই বরদাশত করছে না। যারা স্বাধীনভাবে ওই গণমাধ্যমে নিজের মতপ্রকাশের চেষ্টা করছে, তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ংকর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে, নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মূলত মুশতাক আহমেদকে কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুশতাক লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারি, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না, বরং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র মুশতাক আহমেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গেলে অকালে তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হলো। মুশতাকের এই নির্ভীক আত্মদানের মধ্য দিয়েই দেশের তরুণসমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের কাছে প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন।
ফখরুল বলেন, দেশে আইন-কানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারা দেশে এক শ্বাসরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সারা জাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্য বাকশালী শাসন জারি রাখা হয়েছে, যাতে কেউ টুঁ-শব্দ করতে না পারে। মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সকল বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে।
রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়া রূপ ধারণ করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল, মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষরা। নজীরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে, সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন ব্লগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। তবে এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি হবে ভয়াবহ। মুশতাকের এই মৃত্যুতে সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে। মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তার ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। সরকারি হেফাজতে কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ফখরুল। পাশাপাশি গত বছর মে মাসে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আটক কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের মুক্তি চান।
/এএইচ/শাআ/