ছয় দশক ধরে সংগীতে দীক্ষা ও শিক্ষা দেয়া করুণাময় অধিকারীর জগৎ জোড়া খ্যাতি বোঝা যায় ‘মাস্টার মশাই’ অভিধা পাওয়া থেকেই। দেশ-বিদেশের হাজারো শিক্ষার্থী ছাড়াও আপামর ফরিদপুর বাসী এই সংগীতগুরুকে ওই সম্বোধনেই সম্মানিত করেন, শ্রদ্ধা জানান।
৮৭ বছর বয়সী মাস্টারমশাইকে ‘গুরুদক্ষিণা প্রদানোৎসব’ শিরোনামে আরো একবার সম্মাননা জানানোর পাশাপাশি তার জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মাস্টার মশাই’- এর মোড়ক উন্মোচন করেছে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চ। ‘সুরের গুরু, দাও গো সুরের দীক্ষা’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সহায়তা করে ফরিদপুর প্রেসক্লাব।
বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল দিন শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সূচনা বক্তব্যে ‘মাস্টার মশাই’ গ্রন্থের সম্পাদক বিপ্লব বালা বলেন, বিশ্ব সংসারে বাঙালির অর্জন তুলনারহিত। কিন্তু বাঙালি জানে না, কি তারা অর্জন করেছে। একুশে তেমনই একটি অর্জন। এ দিনে নিজেদের প্রচলিত রীতি-নীতির মধ্যে আটকে না রেখে ভিন্নমাত্রা দেওয়ার তাগিদে এ আয়োজন।
তিনি বলেন, মানুষের প্রধান শক্তি সুর। এই সুরের কাজ যারা করে যান, যারা বিলিয়ে যান তাদেরই একজন করুণাময় অধিকারী। তিনি গত ৬০ বছর ধরে সুরের সাধনা করে আসছেন। তার হাজার হাজার শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন। এমন একজন গুণীজনকে সম্মাননা জানানোর উপযুক্ত দিন। এ কারণে আজকের দিনটি সফল করতে এ আয়োজন।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খোকন বলেন, মানুষ সুর নিয়ে বেঁচে থাকে। এজন্য প্রত্যেক বিদ্যালয়ে একজন করে সংগীত শিক্ষক প্রয়োজন। বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও পাশাপাশি ফরিদপুরের অতীত-ঐতিহ্য রক্ষা করতে কাজ করবে নাগরিক মঞ্চ। এ লক্ষ্যে আজকের এ আয়োজন।
সম্মাননা স্মারক পাঠ করেন জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটু। সংগীত গুরুকে ধুতি ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন শিশু সংগঠন ফুলকির সভাপতি অঞ্জলি বালা ও ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন।
অনুভূতি প্রকাশ করেন ফুলকির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আজম ও ‘মাস্টার মশাই’ গ্রন্থের প্রকাশক মেহেদী হাসান। মাস্টার মশাইকে নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করে ব্রততী দাস। সংগীত পরিবেশন করেন বাউলশিল্পী ফকির আজমল শাহসহ অন্যরা।
মো. আলাউদ্দিনের বাঁশি বাজানোর মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে গেল দ্বার’- সমবেত গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংগীত গুণীনকে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। পরে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন করুণাময় অধিকারী। নিজের সম্পর্কিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনও করেন এই সংগীতগুরু। অনুষ্ঠান শেষ হয় সমবেত জাতীয় সংগীত দিয়ে।
করুণাময় অধিকারী শহরের রথখোলা এলাকায় বসবাস করছেন। গত ৬০ বছর ধরে তিনি ফরিদপুর সংগীত গুরু হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ছিলেন ফরিদপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উত্তরণ সংগীত নিকেতন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও এখনো নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ সংগীতের তালিম দিয়ে থাকেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাস্টার মশাই।
/এআর/