মিয়ানমারের অভ্যুত্থান এবং গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ দমনের বিষয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার।
অন্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বেশ দেরীতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে কোরিয়া। অন্যান্য দেশগুলো ইতোমধ্যে মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে, এবং ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মুন জায়ে-এর প্রশাসনকে নিশ্চুপ বলে বিবেচনা করছেন কয়েকজন পন্ডিত। কেননা, ৪২০ টিরও বেশি কোরিয়ান সংস্থা মিয়ানমারে কাজ করছে, যেগুলো ব্যবহার করে সামরিক জান্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব।
প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সু হুন-এর সভাপতিত্বে একটি সাপ্তাহিক বৈঠকে জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিলের (এনএসসি) স্থায়ী কমিটি বলেছে, ‘মিয়ানমারের সাংবিধানিক শৃঙ্খলাকে আইনি ও গণতান্ত্রিক পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনার জন্য কোরিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।’
এতে যোগ করা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের কোরিয়ান নাগরিক এবং সেখানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষার নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে সরকার।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী চোই জং-কুন কোরিয়ায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত থান্ট সিন-এর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। উক্ত সাক্ষাতে ‘মিয়ানমারের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন’ এই মন্ত্রী।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারে আটক বেসামরিক নেতা অং সান সু চি-র ‘তাত্ক্ষণিক মুক্তি’ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, ‘একই সঙ্গে, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের সাক্ষী হিসেবে, গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আবেগকে শ্রদ্ধা করে এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের অধিকার লঙ্ঘন করা উচিত নয়’।
পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন করে কোরিয়া। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে এনএলডি জয়ের আগে, কয়েক দশক ধরে সামরিক একনায়কতন্ত্রের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছে মিয়ানমার।
চোই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে আরো বলেছেন যে মিয়ানমার সংকট নিরসনে সহায়তা করার জন্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে কোরিয়া। এছাড়াও, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিতে অবস্থানরত কোরিয়ান নাগরিক এবং সংস্থাগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাকে অনুরোধ করেছেন এই উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি ইঙ্গিত করেছেন যে এটি জো বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত এশিয়া-প্যাসিফিক জোটের লক্ষ্য অনুসারে করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অন্য মিত্রদের আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।
হ্যান্ডং গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক, পার্ক উওন-গন বলেছেন, ‘অন্য দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য তাদের সংস্থাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে, এবং আমি বুঝতে পারছি না যে কোরিয়া কেনো এই পদক্ষেপটি নিচ্ছে না।’
সূত্র: কোরিয়া টাইমস
/এফসি/