ভোজ্যতেলের বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে চলমান অস্থিরতা ঠেকাতে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন সংক্রান্ত সরকারি কর্মকতা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সমন্বিত জাতীয় কমিটি। নির্ধারিত ওই দামে ভোজ্যতেলের বিক্রি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক উৎস থেকে নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুত বাড়ানো ও ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রিকে নাগরিক পরীবিক্ষণের আওতায় আনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতেরও দাবি জানায় সংস্থাটি।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ সরকারের শীর্ষ মহলের আন্তরিকতার বহির্প্রকাশ। কিন্তু নির্ধারিত মূল্য কার্যকরে মাঠ পর্যায়ে যথাযথ নজরদারিতে আন্তরিকতার ঘাটতি হলে এ উদ্যোগের সফলতা নিয়ে সংশয় থেকে যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার নির্ধারিত বিক্রি মূল্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১১০ টাকা ও খুচরা ১১৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াাবিন তেল মিলগেটে ১২৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১২৭ টাকা ও খুচরা ১৩৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেটে ৫৯০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ৬১০ টাকা ও খুচরা ৬৩০ টাকা। যা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা আর্ন্তজাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দেশীয় ট্যারিফ কমিশনের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বর্ধিত মূল্যকে প্রকারান্তরে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান বলে মতপ্রকাশ করেন। ভোজ্যতেল একটি আমদানিকৃত পণ্য। ট্যারিফ কমিশনের অনুমতি ছাড়া মূল্য বাড়ানো যায় না। আর যেহেতু মোড়কে বিক্রি হয়, সেহেতু মোড়কের গায়ের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি নিষিদ্ধ। তারপরও ব্যবসায়ীরা বাড়তি মূল্যে বিক্রি করছেন।
সরকারের তদারকি সংস্থাগুলো নীরব দর্শক থাকায় এই দাম বেধে দেয়া ভোক্তা পর্যায়ে কোনো সুফল আনবে না বলে বিবৃতিতে মত প্রকাশ করেন ক্যাবের সংগঠকরা।
বিবৃতিতে বলা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সফল নেতৃত্বে দেশ করোনা মোকাবিলায় অনেকটা সফল। অনেকগুলো সূচকেও অনেক অগ্রগতি হলেও গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে সরকারের পুরো অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও সরকার দলীয় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। যা দেশে ন্যায্য ব্যবসার প্রসারে বড় বাঁধা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার এর আগে আলুর দামও বেধে দিয়েছিলো, কিন্তু সেই দামে আলু পাওয়া যায়নি। ২/১টি জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালেও ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ রেখে ধর্মঘট করলে আর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উর্ধ্বমূখী চালের বাজারও দাম বেধে দিয়ে, শুল্ক কমিয়ে, বিদেশ থেকে চাল আমদানি করেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে চিহ্নিত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি সরকার।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী মার্চ মাস পাম ও সয়াাবিন তেল উৎপাদনের মৌসুম। ফলে আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমতে পারে। আসন্ন পবিত্র রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি না করতে পারেন, সেজন্য এখন থেকে আমদানি, বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে বিপণনে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।
পেঁয়াজের মতো কৃষকদের প্রণোদনা নিয়ে সরিষার উৎপাদন বাড়িয়ে সরিষার তেল উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করে বিকল্প বাজার তৈরির পক্ষেও মত প্রকাশ করে ক্যাব।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। জেলা, উপজেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, ভোক্তা প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত বাজার তদারকিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও অস্থিরতা ঠেকানো সম্ভব। মজুতদারি ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে নগদ অর্থদণ্ডের পাশাপাশি প্রয়োজনে জেল-জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ ধরনের সমাজবিরোধী কাজে জড়িতদের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে।
/এআর/