ময়মনসিংহের চালের দর কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। গত ১৫ দিন ধরে পাইকারি বাজারে একই দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজার থেকে কিনতে গেলেই গুণতে হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন এক সপ্তাহের মধ্যেই নেমে আসবে চালের দর। স্বস্তির খবর কেবল সবজিতে। অধিকাংশ সবজির দামই কমেছে। হু হু করে দাম বাড়ায় মাছের উত্তাপ কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে ময়মনসিংহের মেছুয়া বাজার, বউবাজার (নাটক ঘরলেন রোড), নতুন বাজার, শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে সবজির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বাজারগুলোতে শীতকালীন প্রায় সব সবজির দামই কমেছে। তবে, হঠাৎ করেই বেড়েছে কিছু তরিতরকারির দাম।
নগরীর মেছুয়া বাজার সংলগ্ন সবজির বাজারে দেখা যায়- টমেটো প্রতি কেজি ১০ দরে বিক্রি হচ্ছে। শষা ১০ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা, কাঁচা পেপে প্রতি কেজি ৬ টাকা, ফুলকপি ৩-২ টাকা পিস, দেশি লাউ ৩০ টাকা, মিষ্টি লাউ প্রতি কেজি ৬ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ২০ টাকা, গাজরের দাম ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ১০ টাকা, মুলা ১৫ টাকা কেজি, মটরসুটি আগের দামে ৩০ টাকা কেজি, দেশি পেঁয়াজে চার টাকা কমে ২৪ টাকা, রসুন আগের দামে প্রতি কেজি ১১০ টাকা, আদা আগের দামে ৬০ টাকা, লেবু ৩০ টাকা হালিতে বিক্রি করায় ক্রেতাদের দৃষ্টি নেই লেবুতে। কাঁচামরিচের দাম অর্ধেক বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে।
মাছের দাম এখনো বাড়তি। মাছ বিক্রেতা মামুন গাজী, বাবুল মিয়া, জজ মিয়া, রাশেদ, ভব দাস, শিপন জানান, সপ্তাহের ব্যবধান ছাড়াই প্রতিদিন মাছের দাম ওঠানামা করছে। তবে বেশিরভাগ মাছের দাম উর্ধ্বমুখী। দুই কেজি ওজনের রুই মাছ প্রতি কেজিতে দশ টাকা বাড়িয়ে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুইটা দেড় কেজি ওজনের তেলাপিয়া প্রতি কেজিতে দশ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা, চার কেজি ওজনের সিলভার কার্প প্রতি কেজিতে বিশ টাকা বাড়িয়ে ১৫৫ টাকা, বোয়াল মাছের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা, তিনটা এক কেজি ওজনের প্রতি কেজিতে দশ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, বড় গলদা চিংড়ির দাম ৪০ টাকা বেড়ে ৫৬০ টাকা, স্থিতিশীল রয়েছে কাতলা মাছের দাম। বড় কাতলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। তবে, ইলিশের দাম দুইশ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবার একই সবজি নগরীর বউ বাজারে (নাটক ঘরলেন) কেজি প্রতি ৮-১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। এখানে টমেটো ১৫ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, সিম ২০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, কাচামিচ ৬০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ২০ টাকা, লতা ৫০ টাকা, জাম আলু ২৫ টাকা, করলা ৪০ টাকা, মটরসুটি ৪০ টাকা, মিষ্টি লাউ কেজি ২০-২৫ টাকা, কাঁচা পেপে ২০ টাকা, বাঁধাকপি ১০-১৫ টাকা পিস, ফুলকপি ১০ টাকা, ঢেঙ্গা প্রতি হালি ১০ টাকা, দেশি আলু ২০ টাকা, বড় আলু ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারে খুচরা দরে মাছ বিক্রি করা হয়। দুই কেজি ওজনের পাঙ্গাশ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা, আড়াইশ গ্রাম ওজনের রুই মাছ ১২০ টাকা, এক কেজি ওজনের তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, এক কেজি ওজনের কাতলা প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, গুলশার দাম কেজিতে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এখানে বাজার করতে আসা আসাদুল হক নামের একজন ক্রেতা বলেন, ময়মনসিংহ শহরের বাজারগুলোতে মাছ-তরিতরকারি একেক বাজারে একেক দাম। মেছুয়া বাজারে সকাল হতেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকায় করেনাকালীন সময় থেকে এখান থেকেই বাজার করি। তবে, হাঠাৎ করেই বিভিন্ন অজুহাতে সবজিসহ মাছের দাম বাড়ানো হয়।
সবজি বিক্রেতা মোস্তাফা কামাল, আব্দুল সামাদ, মনির খাঁ জানান, এই বাজারের সবজি-মাছসহ সবকিছু ভোরে নগরীর মেছুয়া বাজার সংলগ্ন সবজি বাজারে গিয়ে পাইকারি দরে কিনে আনেন। গাড়ী ভাড়ার খরচের জন্য সামন্য বেশি দামে তারা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশি মুরগি, ব্রয়লার মুরগি, কক মুরগির মাংসের দাম। মেছুয়া বাজার সংলগ্ন সবজির বাজারে ১০ বছর যাবৎ মুরগি বিক্রি করেন খোকন মিয়া। তিনি জানান, মুরগির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেচাকেনা কম। আমিরুল ইসলাম, রাব্বি, বকুল মিয়া জানান, দেশি মুরগী প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৪০ টাকা হয়েছে, ব্রয়লার মুরগী ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৪০ টাকা, কক মুরগী ৩২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০ টাকা হয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে গরুর মাংসের দাম। ত্রিশ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত অবস্থায় খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর গাঙ্গিনাড়পাড় বাজার ঘুরে জানা যায়,
খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা, ১ লিটার বোতলে দুই টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা, কেঙ্গারু ডাল স্থিতিশীল অবস্থায় ১১০ টাকা কেজি, মোটা ডাল কেজিতে তিন টাকা বাড়িয়ে ৬৮ টাকা, মাশকালাই ডালে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা কেজি, মুগের ডাল কেজিতে পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, জিরা কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা, এলাচি অপরিবর্তিত অবস্থায় ২৪০০ টাকা কেজিতে খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে খুচরা বিক্রিতেও এর কোনো প্রভাব পড়েছে না।
গাঙ্গিনাড়পাড়ে বাজার করতে আসা ফারুক হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আসাদ নামের কয়েকজন বলেন, শীতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। তবে সব পণ্যেরই ঘুরে ঘুরে দাম বাড়ছে। কখনো চাল, কখনো পেঁয়াজ, আবার কখনো তেলের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে চালের দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।
পাইকারিভাবে সবধরনের চাল বিক্রি হয় নগরীর ২৮ নম্বর হেজবুল্লাহ রোডে। চালের এই বাজারে গিয়ে জানা যায়, চাউলের দাম এখনো উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কিছুতেই কমছে না দর। ফলে বাধ্য হয়েই চাল কিনতে হচ্ছে।পাইকারিভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
ময়মনসিংহ নগরীর হেজবুল্লাহ রোডের চাল
মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বিধু বলেন, গত পনের দিন যাবত চাউলের দামে উঠানামা নেই। বস্তা প্রতি চাউলের দাম বাড়ায় পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়েছে। ফলে খুচরা বিক্রেতারাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে তারা ১০০ টাকার বেশি বস্তা প্রতি দাম বাড়ায় না। তবে, সামনের সপ্তাহে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
/আরআর/