ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, দেশভাগের আগে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা যখন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পাঁয়তারা করছিলেন, তখনই বঙ্গবন্ধু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেছেন। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এলে প্রথম যে সভা কার্জন হলে হয়েছিল, সেই সভায় নানা ধরনের প্রতিবাদ হয়েছিল। সেখানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সমস্ত ঘটনার সাক্ষ্যপ্রবাহ বলে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেমিনারটির আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৪৯ সালে গ্রেপ্তারের পর একটানা বায়ান্ন সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। কারাগারেও তিনি কিন্তু বসে ছিলেন না। সেখান থেকেও ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি তিনি কারাগারে অনশন করেছেন। ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে যে অন্যায় করা হচ্ছে, বাধা দেয়া হচ্ছে, সেগুলোর প্রতিবাদে ফরিদপুর কারাগারে অনশন করেন। এ বিষয়গুলো আগে জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ও সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছিলেন জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা ১৯৫৬ সালে শুরু হয়। শহীদ মিনার সরকারিভাবে নির্মাণ ও সেটির পৃষ্ঠপোষকতা, এটিও ৫৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর শুরু হয়। তার আগে কিন্তু সেটি হয়নি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান হওয়ার পর পরই। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং এখন যে সিক্রেট ডকুমেন্টস গুলো বের হচ্ছে সেগুলো যদি কেউ পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছিলেন। এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো একটি বিষয় কখন বলতে হয় সেটা বঙ্গবন্ধু জানেন। সেজন্যই তিনি রাজনীতির কবি। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে যদি ছয় দফা দাবি উত্থাপন না করে স্বাধীনতার কথা বলতেন, তাহলে আজও স্বাধীনতা আসতো না। ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে প্রথমে তিনি বাঙালির মনে স্বাধীনতার জন্য মনন তৈরি করেছিলেন। তিনি জানতেন, সত্তর সালের নির্বাচনের পর পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তারপর কি করতে হবে সেই পরিকল্পনাও তিনি তৈরি করে রেখেছিলেন। সেই পরিকল্পনা অনুসারে কিন্তু তিনি ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে কার্যত স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলেছিলেন। কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন, শুধু এই ঘোষণাটিই তিনি করেননি। ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকেই লিখেছেন, 'চতুর শেখ মুজিব কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন সেই কথা বলেননি।'
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিষয়ে ইউনেস্কো জানিয়েছিল, কোনো ব্যক্তি আবেদন করলে সেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এজন্য রাষ্ট্রকে আবেদন করতে হবে। এই খবর যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জানলেন তখন হাতে মাত্র দুইদিন সময়। দুই দিনের মধ্যে এই বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো কোন রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু শেখ হাসিনা শুধু প্রস্তাবই পাঠাননি, এর জন্য লবিংও করেছেন ওই সময়ের মধ্যে। শিক্ষামন্ত্রীকে প্যারিসে পাঠিয়েছেন। সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে, লবিং করেছেন এবং ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃত হয়েছে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান আর শহীদ মিনার সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সিম্বল হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এটি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মাধ্যমে। এটিও বাঙালি জাতির বড় অর্জন।
সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ষড়যন্ত্র হয়েছে, হচ্ছে। সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
/এসএস/ এআর/