প্রেমের অভিনয় করে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণের পর অনলাইনে ছড়িয়ে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে রিফাত শেখ ওরফে আকাশ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জানান, পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং থেকে পরিচালিত ফেসবুক পেইজে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বগুড়ার কলোনী চক ফরিদ মহল্লার একটি বাড়ি থেকে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ থেকে এক ভদ্রলোক পুলিশের ফেসবুক পেইজে এক বার্তায় বলেন, তার পরিচিত ও প্রতিবেশি কিশোরী মাদ্রাসা ছাত্রী আকাশ নামের এক যুবকের সঙ্গে অনলাইন সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারনার শিকার হয়েছে। মেয়েটির সাথে প্রেমের অভিনয় করে ও তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে অনলাইনেই মেয়েটির কিছু অপ্রীতিকর ছবি ও ভিডিও ধারন করে আকাশ। পরবর্তীতে এ ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে নানাভাবে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে আকাশ। হাতিয়ে নিতে থাকে টাকা পয়সা ও গহনা। শুরুতে মেয়েটি তার পরিবারকে কিছু জানাতে না পারায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
পরিবারকে বিষয়টি জানানোর পর মেয়েটিকে তার সম্মতিক্রমে তড়িঘড়ি বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মেয়েটির স্বামী ও তার স্বামীর আত্মীয় স্বজনের কাছে মেয়েটির নগ্ন ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে বিয়েটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। এর কিছুদিন পর পরিবারের উদ্যোগে মেয়েটিকে আবার বিয়ে দেয়া হয়। রিফাত শেখ ওরফে আকাশ একইভাবে এ দ্বিতীয় বিয়েটিও ভেঙ্গে দেয়। তখনও ওই যুবকের সুষ্পষ্ট কোনো ঠিকানা বা বিস্তারিত পরিচয় জানা ছিল না মেয়েটির। সে শুধু জানতো ছেলেটির বাড়ি বগুড়া।
সর্বশেষ আর কোনো উপায়ান্তর না দেখে প্রতিবেশি এক ভদ্রলোকের সাথে পরামর্শ করে মেয়েটি ও তার পরিবার। এই ভদ্রলোক সব কথা শুনে নিজেই পুলিশের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে একটি বার্তা পাঠিয়ে মেয়েটির জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতা চান।
এআইজি সোহেল রানা বলেন, বার্তাটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখা থেকে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমান ও তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসিকে অবগত ও উক্ত যুবককে সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঞাকে অনুরোধ করা হয়। তিনি তাৎক্ষনিক ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভাব্য নানাস্থানে রেইড দেন। অবশেষে বুধবার কলোনী চক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুত্ব করতো। পরে তাদের সাথে প্রেমের অজুহাতে অন্তরঙ্গ হয়ে সেইসব মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারন ও তা ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল।
পরে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম ওই দিন সকালেই বাদীর উপস্থিতিতে দ্রুততম সময়ে পর্ণোগ্রাফি আইনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে মামলা করেন। পরে, জেল হাজতে প্রেরনের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ টিম পাঠিয়ে আসামীকে বগুড়া থেকে গোপালগঞ্জে নিয়ে আসা হয়।
/এনএএইচ/শাআ/