অস্ট্রেলিয়ান ব্যবহারকারীদের জন্য সংবাদ-সম্পর্কিত বিষয়বস্তু শেয়ার করা বা দেখা বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক। সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রতি জনগণের অধিকার নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে অস্ট্রেলিয়ানরা দেখেন স্থানীয় এবং বৈশ্বিক নিউজ সাইটগুলোর ফেসবুক পেইজ তারা দেখতে পাচ্ছেন না।
অস্ট্রেলিয়া সরকার বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞাটি ফেসবুকের ‘বিশ্বাসযোগ্যতাকে’ হুমকির মুখে ফেলেছে।
এ ছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ার বাইরের মানুষরা প্ল্যাটফর্মটিতে কোনো অস্ট্রেলিয়ান সংবাদ প্রকাশনা দেখতে পাচ্ছে না।
সংবাদ সামগ্রীর জন্য অর্থ প্রদান করার আইন প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছে, প্রযুক্তি সংস্থা এবং প্রকাশকদের মধ্যে লভ্যাংশের সমতা তৈরি করার জন্য তারা আইন তৈরি করেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক জানায়, এই আইনটি তাদের জন্য দুটি পথ খোলা রেখেছে। এই সম্পর্কের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে এমন একটি আইন মেনে চলার জন্য তাদেরকে চেষ্টা করতে হবে, অথবা অস্ট্রেলিয়ায় তাদের পরিষেবাগুলোতে সংবাদ সামগ্রী বন্ধ করে দিতে হবে।
এটি একটি ব্লগ পোস্টে বলেছে সংস্থাটি জানায়, ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা পরবর্তী পথটি বেছে নিচ্ছি।’
অস্ট্রেলিয়ান প্রকাশকরাও তাদের ফেসবুক পেইজগুলোয় কোনো লিঙ্ক শেয়ার বা পোস্ট করতে পারছে না। দেশটির জাতীয় সম্প্রচারক, এবিসি এবং সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও দি অস্ট্রেলিয়ান-এর মতো সংবাদপত্রগুলোর কয়েক মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে।
ফেসবুক জানিয়েছে, গত বছর রেফারেলের মাধ্যমে তারা অস্ট্রেলিয়ান প্রকাশকদেরকে প্রায় ৪০৭ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার (২২৮ মিলিয়ন ইউরো; ৩১৬ মিলিয়ন ডলার) আয় করতে সহায়তা করেছে, কিন্তু সংবাদ সামগ্রীর জন্য তাদের নিজেদের আয় একেবারেই ন্যূনতম।
ফেসবুকের এই পরিবর্তন অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার পেইজও নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ এবং জরুরি পরিষেবা, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং আবহাওয়া ব্যুরোসহ আরো অনেক।
এ ছাড়াও, দাতব্য সংস্থা, রাজনীতিবিদ, ক্রীড়া গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে।
পরে ফেসবুক একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে এই পেইজগুলো "অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রভাবিত হয়েছে" এবং এগুলো পুনরায় স্থাপন করা হবে, তবে সংস্থাটি এর জন্য কোনো সময়সীমা জানায়নি।
একজন মুখপাত্র বলেছেন, আইনটিতে ‘সংবাদ সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর’ একটি ‘বিস্তৃত ধারণা’ গ্রহণ করেছে সংস্থাটি।
নিষেধাজ্ঞাটির ফলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক তাদের বিশ্বস্ত এবং অনুমোদনযোগ্য উৎসগুলোয় প্রবেশ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
বেশিভাগ মানুষ ইঙ্গিত করেন যে ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যার সাহায্যে তারা মহামারি ও জাতীয় দুর্যোগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জরুরি সংবাদ পেয়ে থাকেন।
অস্ট্রেলিয়ার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, ফেসবুক দেশের তথ্যপ্রবাহকে সীমাবদ্ধ করছে, যাকে তিনি একটি ‘বিপজ্জনক ঘটনার মোড়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণশীল সরকার আইনটি নিয়ে সংকল্পবদ্ধ, তবে এটি নিয়ে সংসদে আবারো বিতর্ক হবে। আইনটির পক্ষে বিভিন্ন পার্টির সমর্থন রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
/এফসি/আরআর/