টাঙ্গাইলে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করলেই পুত্রবধূকে উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা।
এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন।
তিনি নিজে গিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেতনের টাকা থেকে এসব উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন। উপহারের মধ্যে রয়েছে- টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ী, পোড়াবাড়ির চমচম ও ক্রেস্ট। সেই সঙ্গে পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ওসি। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ওসি মীর মোশারফ হোসেন তিনজনকে এই উপহার দেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তার বাড়ি জামালপুরে। পিতা মৃত আব্দুল হক সরকার। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে মোশারফ হোসেন সবার ছোট।
সদর থানার ভেতরে প্রবেশ করেই দেখা যায়- একটি ফেস্টুনে লেখা আছে ‘বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস’। পুত্রবধূ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন।’
সেখানে আরো লেখা রয়েছে- ‘শ্বশুর শাশুড়িকে যে সেবা যত্ন করবে এবং একসাথে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতিকে পুরস্কৃত করা হবে এবং যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার উল্লেখ্য করা রয়েছে।’
শহরের কলেজপাড়ার শিউলি বলেন, ‘আমি টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেটি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো ভালোবাসি এবং তাদের সেবা যত্ন করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি অবগত করার জন্য আমি নাম্বারে ফোন করি। পরবর্তীতে বিকেল বেলায় দেখি ওসি স্যার নিজে এসে আমাকে উপহারগুলো তুলে দেন।’
মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমি পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রতি আরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুর শাশুড়িকে এমনিতেই দেখাশুনা করি। ভবিষ্যতেও একই রকম তাদের সেবা করে যাব।’
মাহমুদার শ্বশুর কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ে আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমার ছেলের বউও ঠিক তেমনি ভালোবাসে। আমাদের দেখভাল ও সেবাযত্নে কোন ত্রুটি করে না। এমন ছেলে বউ পেয়ে আমরা সত্যিই ভাগ্যবান ‘
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন বলেন, আমার ছেলে ও ছেলে বৌ আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সেবা করে। একজন পুলিশ অফিসার আমার বৌমাকে পুরস্কৃত করেছে। পুরস্কার পেয়ে সে তো আত্মহারা।
এ ব্যাপারে ওসি মীর মোশারফ হোসেন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আমরা লক্ষ্য করেছি এবং আমাদের কাছে অভিযোগ আসে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা ও মা অযত্নে জীবন যাবন করেন। অনেকেই ঠিকমত খাবারও দেয় না। ঠিক মতো সেবাযত্ন করে না। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকা সত্ত্বেও সন্তানেরা বাবা-মাকে ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বসবাস করে। অনেক সন্তানরা কাজের প্রয়োজনে বাহিরে ব্যস্ত থাকে। তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা।
তিনি আরো বলেন, যারা বাবা মাকে ছেড়ে দুরে চলে যায় এবং আবার অনেক পরিবারে একাধিক সন্তান আছে, তখন তাদের পিতা-মা কে কে বরণ পোষণ নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দুরে সরিয়ে দেয়। সে সব সন্তান ও পূত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ হয়ে, আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেন কোনো বাবা মা অবহেলা এবং অযন্তে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।
ওসি বলেন, প্রথমদিন মঙ্গলবার আমি ৩ জনকে পুরষ্কার দিয়েছি। আজকে আরো বেশ কয়েকজনকে দেয়া হবে। আমার এ ধরনের কার্যকম অব্যহত থাকবে।
উল্লেখ্য যে, এর আগে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা টাঙ্গাইল কাগমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ মোশারফ হোসেন কন্যা সন্তান জন্ম হলে ওই বাড়িতে হাজির হয়ে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কন্যা সন্তানের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন উপহার সামগ্রী।
/আরআর/