ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ তাদের নতুন আপডেট বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সংস্থাটি ঘোষণা দেয় যে নির্ধারিত ৮ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে তাদের সাম্প্রতিক গোপনীয়তা নীতির পরিবর্তন ১৫ মে থেকে বাস্তবায়ন করা হবে।
নতুন নীতির শর্তাবলী ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপ্লিকেশন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল। ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন শর্তাদিতে সম্মতি না জানালে গ্রাহকরা তাদের অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস হারাবেন বলে জানানো হয়।
ব্যবহারকারী এবং গোপনীয়তা কর্মীরা শঙ্কা প্রকাশ করায় হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস-এর মাধ্যমে ব্যবসায় সহায়তা করার জন্য এই পরিবর্তনগুলো প্রয়োজন। ব্যবসা এবং গ্রাহকদের মধ্যে যোগাযোগের সুবিধার্থে ২০১৮ সালে সংস্থাটি হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস চালু করেছিল।
শুক্রবার একটি ব্লগ আপডেটে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, “আমরা এখন সেই তারিখে ফিরে যাচ্ছি যেখানে শর্তাদি পর্যালোচনা এবং গ্রহণ করার জন্য গ্রাহকদেরকে বলা হবে। ৮ ফেব্রুয়ারিতে কারো অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা বা মুছে ফেলা হবে না। হোয়াটসঅ্যাপের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ভুল তথ্য পরিষ্কার করার জন্যও আমরা অনেক কিছু করতে যাচ্ছি। এরপর, ১৫ মে নতুন ব্যবসায়িক বিকল্পগুলো আসার আগে আমরা ধীরে ধীরে ব্যবহারকারীদের কাছে তাদের নিজস্ব গতিতে নীতি পর্যালোচনা করতে যাব।”
গোপনীয়তা নীতিতে হোয়াটসঅ্যাপের পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে একটি পিআইএল দায়ের করা হয়েছে। “সকল ধরণের গ্রাহকের বিবরণ/তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী, বিধিবদ্ধ এবং অন্যান্য সকল দায়িত্ব পালনের” নির্দেশনা চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে আবেদন করে কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স।
হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সীমিত পরিমাণ তথ্য ইতোমধ্যে ফেসবুকের সঙ্গে আদান প্রদান করা হয়। তবে হোয়াটসঅ্যাপের পরিষেবা শর্তাদির পরিবর্তন কার্যকর করার জন্য ২০১৬ সালে এই আপডেটটি এসেছিল এবং এরপরে উল্লেখযোগ্যভাবে আর কোনো আপডেট হয়নি।
হোয়াটসঅ্যাপের নীতিমালা আপডেট করার বিষয়ে গোপনীয়তা বিশেষজ্ঞদের উত্থাপিত একটি মূল বিষয় হল, ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মটি ইউরোপ এবং ভারতের জন্য পৃথক গোপনীয়তা এবং ডেটা শেয়ারিং নীতিমালা তৈরি করেছে। একারণে, ভারতের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনটির তাত্ক্ষণিক বাস্তবায়ন করার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়েছে।
২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী ৫ কোটিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস ব্যবহারকারী আছেন, যাদের মধ্যে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী প্রতি মাসে ভারতে এই পরিষেবা ব্যবহার করছেন। গত বছরের এপ্রিলে, ফেসবুক যখন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির জিও প্ল্যাটফর্মে ৫.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করে, তখন হোয়াটসঅ্যাপ এবং রিলায়েন্স রিটেইল একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। যার আওতায় ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম জিওমার্টের ছোট ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করা হবে।
হোয়াটসঅ্যাপের গোপনীয়তা নীতি আপডেট করার ঘোষণার পর, গত সপ্তাহে অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যাপল প্ল্যাটফর্মে শীর্ষস্থানীয় একটি অ্যাপ্লিকেশন হয়ে ওঠে সিগন্যাল। উল্লেখ্য, ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে ভারত হোয়াটসঅ্যাপের অন্যতম বৃহত্তম বাজার। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা ১৭ লাখ, যেখানে সিগন্যালের ডাউনলোড সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ।
৪ জানুয়ারী হোয়াটসঅ্যাপের ঘোষণাপত্রে সংস্থাটি তার নতুন নীতি সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের জানিয়েছিল। এই ঘোষণাপত্রটির প্রথম কথা ছিল – ‘আপনার গোপনীয়তার প্রতি সম্মান আমাদের ডিএনএতে লিপিবদ্ধ রয়েছে'। এই কথাটি এর আগে মৌখিকভাবে ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান কৌম ব্যবহার করেছিলেন, যিনি ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে সংস্থাটি ছেড়ে দিয়েছেন।
ফেসবুক ১৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে হোয়াটসঅ্যাপ-কে কিনে নেয়ার পরে কৌম লিখেছিলেন “আপনার গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের ডিএনএ-তে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে, এবং আমরা আপনার সম্পর্কে যতটা সম্ভব কম জানার লক্ষ্যে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেছি: আমাদেরকে আপনার নাম জানাতে হবে না এবং আমরা আপনার ইমেইল ঠিকানা জানতে চাই না। আমরা আপনার জন্ম তারিখ জানি না। আপনার বাড়ির ঠিকানা, আপনি কোথায় কাজ করেন তা আমরা জানি না। আপনার পছন্দগুলো, আপনি ইন্টারনেটে কী অনুসন্ধান করেন তা জানি না, অথবা আপনার জিপিএস অবস্থান সংগ্রহ করি না। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এসকল তথ্য কখনোই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়নি, এবং তা পরিবর্তন করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।”
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
/এফসি/এমএইচ/